জগন্নাথপুরে এক পশলা বৃষ্টিতে কৃষকের স্বস্তি || বিদ্যুৎহীন উপজেলাবাসী

প্রকাশিত: ১২:১২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২৫

জগন্নাথপুরে এক পশলা বৃষ্টিতে কৃষকের স্বস্তি || বিদ্যুৎহীন উপজেলাবাসী

হুমায়ূন কবীর ফরীদি ##

বিগত কয়েক দিন ধরে জগন্নাথপুরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকদের মনে হাহাকার চলছিল। অবশেষে এই উপজেলায় বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক কূলের হৃদয়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে বৃষ্টির সাথে হালকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ এর তারের ওপর গাছপালা উপড়ে কিংবা ভেঙে পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
চলতি বোরো মৌসুমের প্রথম দিকে অর্থাৎ বিগত ২৩ শে ফেব্রুয়ারী বৃষ্টির দেখা মিললেও এরপর আর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষক কূলের হৃদয়ে বৃষ্টির জন্য হাহাকার চলছিল। উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওর সহ ছোটবড় ১৫টি হাওরের ২০ হাজার ৪ শত ২৩ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষাবাদ করেছেন কৃষক কুল। কিন্তু খাল-বিলে, যাওরে পানি না থাকায় ও নদীতে পর্যাপ্ত পরিমান পানি না থাকার কারনে কৃষককেরা জমিতে পানি না দিতে পারায় চাষাবাদকৃত জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে এবং রোপণকৃত ধানের গাছ লালবর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কৃষক কূল এর হৃদয়ে হাহাকার চলছিল। গতকাল ১৫ ই মার্চ দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে রাত ৪ টা পর্যন্ত এই উপজেলায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষক কূল এর মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। ভাল ফলন এর আশাবাদী কৃষক কূল।
এ ব্যাপারে কৃষক আমীর আলী, বশর মিয়া, ডালিম, রামেন্দু ও কাজল সহ একাধিক কৃষক তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বৃষ্টির জন্য হাওরপাড়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার চলছিল। অনাবৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার দুশ্চিতায় ছিলাম। দেরিতে হলেও বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তি লাগছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলেও আরও ভালো হতো।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওছার আহমেদ একান্ত আলাপকালে দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকাকে বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নিজেও দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। বৃষ্টি হওয়াতে বোরোধান এর পুষ্টিগুন ভাল হওয়ার পাশাপাশি ফলনও ভাল হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, খরায় ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি।এবার জগন্নাথপুরে ২০ হাজার ৪শত ২৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল ১৫ ই মার্চ দিবাগত রাত ১২ টার পর হতে থেমে থেমে জগন্নাথপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালকা বৃষ্টিপাত এর সাথে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুৎ এর তারের উপর গাছপালা উপড়ে পড়ে ও ডালপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ এর তার ছিড়ে যাওয়ায় উপজেলাবাসী বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার পাশাপাশি নানামুখী সমস্যার সম্মূখীন হয়ে পড়েছেন। বাসাবাড়িতে পানি সংকট, ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ব্যবসা বানিজ্যে ধ্বস দেখা গেছে। অফিস আদালতের কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে দেখা গেছে। বর্তমান সময়ের যোগাযোগ এর অন্যতম মাধ্যম মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবায়ও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ মুঠোফোন চার্জের অভাবে বন্ধ ও সারা উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চার্জের অভাবে বন্ধ রয়েছে। প্রায় ২০ ঘন্টা ধরে জগন্নাথপুরবাসী বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন যাপন করেছেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথপুরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
ইজিবাইক চালক শাহান মিয়া বলেন, আমরা রাতে গাড়ি চার্জ করি আর দিনের বেলায় চালাই। গত রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় গাড়িটি চার্জ করতে পারিনি। গাড়ি না চালালে ঘরে খাবার আসবে কি করে?
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের সকল কাজই তো বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। অন্ধকার দোকানে কাস্টমারও আসে না।
এবিষয়ে গৃহিণী সাহিনা, সায়লা ও আলেয়া সহ একাধিক গৃহিণী তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ফ্রিজের সকল পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানির সংকট রয়েছে। বিদ্যুৎহীন একদিন খুবই কষ্টকর।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ এর জনৈক কর্মকর্তা ও জগন্নাথপুর আবাসিক প্রকৌশল অফিস এর জনৈক কর্মকর্তা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ এর তারের ওপর গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় তার ছিড়ে গেছে। তাই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, জনবল সংকট এর কারনে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে সময় লেগেছে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ