প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২৫
মাইলস্টোনে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান, ইনসেটে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম/ফাইল ছবি
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন বিমানবাহিনীর বিমান পরিচালনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর শহীদুল ইসলাম।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মাইলস্টোনে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটির পাইলটের সঙ্গে আকাশে থাকা অবস্থায় যোগাযোগ ছিল কি না- জানতে চাইলে এয়ার কমোডর শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন বিমান উড্ডয়ন করি তখন আবশ্যিকভাবে বিমানের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, রাডার স্কোয়াড্রন এবং অন্যান্য কন্ট্রোলিং এজেন্সির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের সঙ্গেও একইভাবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ও যখন ল্যান্ড করার জন্য আসছিল তখনো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সংযোগ ছিল।
পাইলটের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তার সর্বশেষ অ্যাকশন কী ছিল এবং কোনো ধরনের জটিলতা ছিল কি না বা কোনো গোলযোগের সম্মুখীন হয়েছিল কি না, এ বিষয়গুলো তদন্ত পরিষদে বিস্তারিত আসবে। আমরা তদন্ত চলাকালীন কোনো আলাদা পর্যালোচনা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকবো।
প্রাথমিক তদন্তে পাইলট শেষ মুহূর্তে কোনো ধরনের জটিলতায় পড়েছিলেন কি না বা তিনি কোনো সাহায্য চেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে এসব বিষয়েও তদন্ত চলাকালীন কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
পাইলট হাইট লুজ করছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে, এ বিষয়ে এবং মাইলস্টোন ভবনের উচ্চতার বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ার কমোডর মো. মিজানুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন এখন অনেককিছু অনুমাননির্ভর আসছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত চলমান। প্রত্যেকটা বিষয় তদন্ত প্রক্রিয়ায় চলে আসবে।
তিনি বলেন, আমাদের একটাই কথা আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন আসুক। মাইলস্টোনের বিষয়টিও তদন্তে আসবে, জাতীয় পর্যায়েও একটা তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটা বিষয়ই আমাদের তদন্তে নিয়ে আসবো। কোনো একটা বিষয় আমরা বাদ দেবো না।
ঢাকায় বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক
মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর রাজধানীর মতো জনবহুল জায়গায় এমন প্রশিক্ষণ পরিচালিত হতে পারে কি না- জানতে চাইলে এয়ার কমোডর শহীদুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধবিমান পরিচালনা, উড্ডয়ন এবং ল্যান্ড করার জন্য সুপরিসর রানওয়ে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, মেইটেন্যান্স এবং লজিস্টিকস ফ্যাসিলিটিজ, ফুয়েল স্টোরেজ, রাডার ফ্যাসিলিটিজের সবগুলাই দরকার হয়। রাজধানীর আকাশ প্রতিরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য স্ট্র্যাটেজিক এবং অপারেশনাল নেসেসিটির জন্য রাজধানীতে বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক। বিমানঘাঁটিগুলো যেখানেই থাকুক ফ্যাসিলিটিজগুলো থাকতে হয়। কিন্তু অপারেশনাল এবং স্ট্র্যাটেজিক নেসিসিটির জন্য পৃথিবীর যে কোনো দেশের রাজধানীতে বিমানঘাঁটি অত্যাবশ্যক।
তিনি বলেন, এসব জঙ্গি বিমানের স্কোয়াড্রনগুলোর প্রয়োজনীয় বছরব্যাপী ট্রেনিং চলমান থাকে। ওই অপারেশনাল বিমানগুলোতেই আমরা ট্রেনিং করে থাকি।
বিমান থেকে বেরোনোর পদ্ধতিতে বিলম্ব হওয়ায় জীবন উৎসর্গ করেন পাইলট
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সময় ভবনটিতে ছিল ৫৯০ শিক্ষার্থী
প্রশিক্ষণ বিমানগুলোতে দুইজন পাইলট থাকেন এবং সিঙ্গেল সিটের যুদ্ধবিমানগুলোর ক্যাপাসিটি এবং ক্যাপাবিলিটিসহই বাহিনীটি যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণগুলো করে থাকে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এয়ার কমডোর মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাইলস্টোনে সোমবার থেকে বিমান বাহিনীর অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে একজন মনোবিজ্ঞানী ও একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এটা অনবরত কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সহায়তার জন্য চীনের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্তকাজে সহায়তার জন্য চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী উদ্ধারজে অংশগ্রহণ করে এবং একই দিনে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
পরে বিমানবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে সম্পাদনের জন্য গত ২১ জুলাই জরুরি সহায়তা কেন্দ্র গঠন করা হয়।
জরুরি সহায়তা কেন্দ্র থেকে আহতদের চিকিৎসা, আহতদের অবস্থান ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য, নিহতদের পরিচয় যাচাই ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ, নিহতদের দাফন ও সৎকার কার্যক্রম সমন্বয়, হাসপাতালে রক্তদাতা প্রেরণ এবং সংগ্রহে সহায়তাসহ যে কোনো জরুরি তথ্য, পরামর্শ ইত্যাদি সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে।
বিমান বিধ্বস্তে নিহত ও আহতদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বিমানবাহিনী। যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
গত ২১ জুলাই দুপুরে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৫ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১১ জন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন। সুত্রঃ জাগো নিউজ২৪
US BANGLA BARTA is proudly powered by WordPress