প্রকাশিত: ২:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২
ইউএস বাংলা বার্তা ডেস্কঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্পের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এত বড় বাজেটের কেনাকাটাকে বিলাসিতা বলছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার যেখানে ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে সেখানে এত বড় বাজেট দেয়া কতটা যৌক্তিক তা পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশ যেখানে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চাইছে সেই বাস্তবতায় বিশাল বাজেটের ইভিএম প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের লক্ষ নির্ধারণ করে এই প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ইভিএম মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। কমবেশি ২ হাজার ৪০০ ডলার হিসেবে প্রতিটি ইভিএম মেশিন কেনা হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। আরো আনুষাঙ্গিক খরচসহ যেটা বর্তমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই লাখ টাকার মেশিন প্রতি খরচ হবে। দুই লাখ মেশিন কিনতেই খরচ হবে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ১৯ জেলায় ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে নির্বাচন পরিচালনা করতে মেশিন পরিবহনসহ যাবতীয় কাজ করতে পাঁচ শতাধিক গাড়ি কিনবে কমিশন। সেই সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে প্রকল্পের আওয়াতায়। সবমিলিয়ে এই খাতে খরচ হবে প্রায় পৌণে চার কোটি টাকা।
দেশে আর্থিক সংকটের ইভিএম প্রকল্পকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশ্লষক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এটা এভয়েডবল এক্সপেন্ডেচার। সরকারের উচিত এই বিশাল ব্যয় থেকে সরে আসা। আমরা ম্যানুয়ালি করে এসেছি, ম্যানুয়ালি ট্রান্সফারেন্ট। আমরা ব্যালট বক্সের মাধ্যমে নির্বাচন করতে পারি। এটা আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্চের স্ট্রেংথের প্রশ্ন। ইভিএম নিয়ে চমর রাজনৈতিক বিতর্ক আছে, সেসময়ে এই ধরনের বিতর্কে না যাওয়া সরকারের জন্য ভালো।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্পসহ ইসির ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গত নির্বাচনে প্রতিটি ইভিএম মেশিন সবমিলিয়ে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। প্রকল্প নেয়ার সময় বলা হয়েছিল এগুলো ১৫ বছরের বেশি টেকসই হবে। কিন্তু পাঁচ বছর না যেতেই প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ ইভিএম মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ইসির সংলাপে ২৯টি রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে মতামত দিয়েছিল। এর মধ্যে নয়টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আরও পাঁচটি দল ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহের কথা বলেছে। কেবল আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। সবার মত উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন মনে করে ইভিএমেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
ইভিএম কেনার সিদ্ধান্তকে নির্ধারিত বলে দাবি কর ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা একটা পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করছি। এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতকে উপেক্ষা করে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তটি বিতর্ক তৈরি করছে। এছাড়া সরকার যে ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বর করছে সেই নীতির পুরোপুরি পরিপন্থি এটি। এটা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত।
তবে ইভিএম প্রকল্পের ব্যয় ও মেশিনের দাম নিয়েও সমালোচনা করছেন অনেকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত নিজেদের বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে যেসব ইভিএম ব্যবহার করেন সেসব হাই-কনফিগারেশন একেকটি ইভিএমের মূল্য মাত্র ২৬ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশে কেনা ইভিএমের মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে, যা ভারতের চেয়ে দশগুন বেশি দামে কেনা হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে অন্তত কয়েকগুন।
নির্বাচন কমিশনের প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্পের বাজেটকে অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারবলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য রকমের সিদ্ধান্ত। দেশের অর্থনৈতিক সংকট যখন চরমে,তখন দাতাগোষ্ঠী উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চাইছি, ঠিক সেই সময়ে এই বাজেটের কোনো মানে নেই। এটা সরকারের দায়বদ্ধতাহীনতার বহিঃপ্রকাশ।’
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতেই ইসির পক্ষ থেকে ইভিএম প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘সরকারের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে কি নেই এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতেই কর্মপরিকল্পনা দিয়েছি। সরকার যদি অর্থ ছাড় করে তবে আমরা ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করব।’
ইভিএমে ভোটের যৌক্তিকতা তুলে ধরে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরে যতগুলো নির্বাচন ইভিএমে
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and Developed by Web Nest