প্রকাশিত: ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২৫
ইউএস বি ডেস্কঃ
রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল ছিল কম। দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল অর্ধেক খোলা অবস্থায়। বেলা ১১টার দিকে নগরীর কেন্দ্রস্থল এলাকায় খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ব্যানার সাঁটিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে ঘোষণা হয় প্রতীকী কর্মসূচি ‘এক ঘন্টার ডেডলক’। এরপর চলে সমাবেশ।
রবিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এভাবেই সড়ক-রেল ও আকাশপথে ভোগান্তি লাঘবে সিলেটে ‘এক ঘন্টা ডেডলক’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর ডাকে কর্মসূচি পালন করা হয়। এক ঘন্টার ডেডলক চলাকালে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে বিভিন্ন ব্যানার সাঁটিয়ে অবস্থান গ্রহণ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। নগরীর বেশিরভাগ দোকানপাট ও বিপণিবিতান, যান চলাচলও ছিল সীমিত। সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্ত হয়।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে সিলেটের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতের কাজ আটকে আছে। ফলে ভাঙাচোরা সড়কে প্রতিনিয়ত লেগে থাকছে দীর্ঘ যানজট। এছাড়া জারাজীর্ন রেললাইন ও ট্রেন এবং টিকিট সংকট ছাড়াও বর্ধিত বিমান ভাড়ার কারণেও যাতায়াত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের মানুষের। এসব কারণে ক্ষুব্ধ এ অঞ্চলের মানুষজনকে নিয়ে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পর পর দুদিন বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে এক ঘন্টার ডেডলক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি চলাকালে নগরী ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিপণিবিতানের ফটক বন্ধ। দোকানপাটেরও সাটার লাগানো। নগরে রিকশা ছাড়া অন্যান্য যান চালাচলও প্রায় বন্ধ ছিল। তবে ১২ টার পর থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়।
কর্মসূচি চলাকালে নগরের কোর্টপয়েন্টে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন,‘আমি বারবার বলে আসছি- এখন আর চুপ করে থাকা সময় নয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেল ও আকাশপথের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও অবহেলা সিলেটবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যদি এই সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় এবং সিলেটবাসীর প্রতি বৈষম্য অব্যাহত থাকে, তবে সিলেটের জনগণকে সংগঠিত করে আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো-এবং এর দায় বর্তমান সরকারেরই নিতে হবে।’
সমাবেশে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হওয়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও পেশাজীবীরা বক্তব্য দেন। তারা বলেন, সড়কপথ, রেলপথ, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৃহত্তর সিলেটবাসীর জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভোগ, অনিয়ম ও চরম নৈরাজ্য আজ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, রেলপথে বগি সঙ্কট ও টিকিট কালো-বাজারি আর আকাশপথে বিমানের টিকিট মূল্য আকাশচুম্বী করে সিলেটকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণের যাঁতাকালে ফেলা হয়েছে।
সমাবেশ থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ও বগি চালু করা। রেল টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা। সিলেট-ঢাকা রুটে বিমানের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা। সিলেটের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন ও টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রভৃতি।
সমাবেশ শেষে আরিফুল হক চৌধুরী ৮ দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণ করতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্মারকলিপির আটটি দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন তিনি। স্মারকলিপি গ্রহণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর ব্যবস্থার বিষয়টি জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেন।
সিলেটের সঙ্গে বৈষম্য কেন, প্রশ্ন আরিফুল হকের
ফ্যাসিবাদী শাসনকালসহ অন্তবর্তী সরকার আমলে সিলেটের সঙ্গে বৈষম্য চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। স্মারকলিপিসহ সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
আরিফুল হক বলেন, মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেটবাসী। সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ন্যায্য প্রাপ্যতা আজও নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি অর্থাৎ নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর ন্যায্য অধিকার থেকে সিলেটবাসী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সমগ্র সিলেটের সড়ক ব্যবস্থা অসহনীয়ভাবে হুমকির মুখে। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ থমকে আছে। শুধুমাত্র মহাসড়ক নয়, সিলেট শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে আম্বরখানা সড়কের তীব্র যানজট সিলেটবাসী সম্পর্কে বহিরাগতদের প্রত্যাশা অনেকাংশে ম্লান করে দেয়। তাছাড়া, বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তারও বেহাল দশা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে পড়েছে অভিযোগ করে আরিফুল হক বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালে যাত্রা শুরুর পর আজ পর্যন্ত সেই মান্ধাতা আমলের নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন। ফলে সিলেটবাসী তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঘন ঘন দুর্ঘটনা, টাকার বিনিময়ে অনির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থামানো, দালালের কারণে টিকিট না পাওয়া, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়াসহ নানা সমস্যা এখন সিলেটবাসীর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন সংযোজনের কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। এ সময় আরিফুল হক প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের মাটিতে পদার্পণের পর নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিমানভাড়ায় যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন। তিনি সিলেটের প্রবাসীদের দাবিগুলো তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-কক্সবাজার রুটে বিমান চালুর দাবি জানান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় সরকার উদাসীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট শহর পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়, কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বন্যাকবলিত অন্য চারটি বিভাগে বাস্তবায়ন করলেও অজ্ঞাত কারণে সিলেট বিভাগে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিলেটের মানুষ বিদ্যুৎ সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেটে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট, সেখানে সিলেট বিভাগে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।” ফলে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে। এ সময় তিনি চাহিদা অনুপাতে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
সিলেটের আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “সিলেট বাংলাদেশের গ্যাস ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সিলেটের অনেকগুলো গ্যাসক্ষেত্র জাতীয় গ্রিডকে সমৃদ্ধ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটের গ্যাস উৎপাদন সাত গুণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সিলেটবাসী আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। সিলেটে গ্যাস থাকবে, আর সিলেটের লোকজন গ্যাস পাবে না তা হবে না। যেখানে খনিজসম্পদ উৎপাদন হচ্ছে, সেই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আরিফ বলেন, আমাদের সঙ্গে টালবাহানা চলবে না, গ্যাস সংযোগ দিতে হবে; অন্যথায় আন্দোলন গড়ে তুলব। সিলেটের শিক্ষা ক্ষেত্রও বৈষম্যের শিকার জানিয়ে আরিফুল হক বলেন, সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষকের ৫২৬টি পদ শূন্য। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণসহ সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মানসম্মত করে গড়ে তুলতে হবে।
সমাবেশে যোগ দেন সিলেটের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলমত নির্বিশেষে সবাই সিলেটের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যনারা, ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হোন।
একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক – তৌফিকুল আম্বিয়া টিপু
বার্তা সম্পাদক- হুমায়ূন কবীর ফরীদি
বাংলাদেশ কার্যালয়- কলকলিয়া বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগন্জ।
প্রধান কার্যালয়- ৮২৪ মেইন স্রীট, মেনচেষ্টার, কানেকটিকাট- ০৬০৪০, যুক্তরাষ্ট্র।
ফোনঃ ০১৭১৭৯৩১৬৫৮(বিডি) +১৮৬০৭৯৬৭৮৮৮(ইউএসএ)
ইমেইলঃ usbanglabarta@gmail.com
Design and Developed by Web Nest