ওসমানী নগরে দাফন সম্পন্ন হওয়া কিশোরকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:০৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৫

ওসমানী নগরে দাফন সম্পন্ন হওয়া কিশোরকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার

সংবাদদাতাঃ

সিলেটের ওসমানীনগরে ‘দাফন’ সম্পন্ন হওয়া এক কিশোরকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। জীবিত উদ্ধার হওয়া এই কিশোরের নাম রবিউল ইসলাম নাঈম (১৪)। সে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের গদিয়ারচর গ্রামের কণাই মিয়ার ছেলে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার (২৩ আগস্ট) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানা পুলিশ তাকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আদালতে উপস্থাপন করেছে।

জানা যায়, নাঈম ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারের ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকার বুলবুল ফকিরের রেস্টুরেন্টে কাজ করত। ২৪ জুলাই সে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। এ ঘটনায় তার মা ওসমানীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

এরপর ৩ আগস্ট কুলাউড়া থানা এলাকায় এক অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়। পুলিশের মাধ্যমে সেই মরদেহকে নাঈমের বলে শনাক্ত করে তার পরিবার। ৫ আগস্ট দাফন সম্পন্ন হয়।

কিন্তু লাশ শনাক্তের পর মামলা করতে গিয়ে ওসমানীনগর ও কুলাউড়া থানা উভয়ই শুরুতে গড়িমসি করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৬ আগস্ট নাঈমের পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার প্রধান আসামি হিসেবে বুলবুল ফকিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

১৭ দিন পর শুক্রবার (২২ আগস্ট) হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নাঈমকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পরিবার বিষয়টি পুলিশকে জানালে কুলাউড়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুস্তাফিজুর রহমান তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন এবং পরদিন আদালতে পাঠান।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক জানান, “রবিউল আত্মগোপনে ছিল। পরিবারের সদস্যরা তাকে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। এখন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাঈম জীবিত থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, একজন রেস্টুরেন্ট মালিক—বুলবুল ফকির—যিনি এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়ে এখনও কারাগারে, তিনি কি নির্দোষ?

স্থানীয়রা বলছেন, মিথ্যা অপবাদে একজন নিরপরাধ ব্যক্তি কারাভোগ করছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ঘটনার শুরু থেকে মামলার গড়িমসি, ভুল লাশ শনাক্তকরণ এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করা—সবকিছু নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে, নাঈমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এই ঘটনাটি স্পষ্টভাবে আমাদের বিচার প্রক্রিয়া ও তদন্ত ব্যবস্থার কিছু গুরুতর ত্রুটি তুলে ধরেছে। আদালত ও প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই কেবল এই বিভ্রান্তিকর ঘটনার সত্যিকারের জবাব মিলবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ