জগন্নাথপুরে কিশোর রিংকন হত্যা, বছর পর রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

প্রকাশিত: ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২৫

জগন্নাথপুরে কিশোর রিংকন হত্যা, বছর পর রহস্য উদঘাটন  করলো পিবিআই

ছবি-আটক জহিরুল ও পাভেল, ইনসেটে হত্যাকাণ্ডের শিকার রিংকন বিশ্বাস।

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রায় এক বছর আগে খামারের ভেতর কিশোর রিংকন বিশ্বাসের মৃত্যুকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও অবশেষে তা হত্যা বলে প্রমাণিত হলো। এক মায়ের নাছোড়বান্দা লড়াই এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্মোচিত হয়েছে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
প্রযুক্তি ও বিচক্ষণ তদন্তের মাধ্যমে পিবিআই এই ক্লু-লেস মামলার জট খুলে দুই ঘাতককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, আম পাড়তে রাজি না হওয়ায় রিংকনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ, দীর্ঘ এক বছর ধরে স্থানীয় পুলিশ দুই দফা তদন্ত শেষে এটিকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২২ জুন জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরে স্থানীয় প্রভাবশালী লুলু মেম্বারের মাছের খামারে কর্মরত কিশোর রিংকন বিশ্বাসের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। প্রভাবশালীদের চাপে রিংকনের বাবা শ্রীকান্ত বিশ্বাস তড়িঘড়ি করে ছেলের সৎকার সম্পন্ন করেন।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে চাপে পড়ে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ২৪ জুন একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে। ২৭ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ জানায়, গাছে আম পাড়তে গিয়ে পা ফসকে গোবরের স্তূপে পড়ে রিংকনের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু ছেলের দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে মায়ের মন পুলিশের এই তত্ত্ব মানতে পারেনি। নিহত রিংকনের মা বাসন্তী রানী বিশ্বাস নিজে বাদী হয়ে আদালতে লুলু মেম্বারসহ ১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ মামলাটি রুজু করলেও তদন্ত শেষে আবারও আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
পুলিশের প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে না পেরে বাসন্তী রানী বিশ্বাস আদালতে পুনরায় নারাজি আবেদন করেন। তাঁর নারাজির ফলেই আদালত ২৩ মার্চ তারিখে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই, সিলেটকে নির্দেশ দেন।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামানের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. তারিকুল ইসলাম তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সূত্রের সাহায্যে তদন্ত শুরু করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ১৭ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত চিলাউরা গ্রামের জহিরুল ইসলাম (২৩) ও পাবেল ওরফে তাবেলকে (২১) গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার দায় স্বীকার করে। শনিবার (১৯ জুলাই) আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা জানায়, ঘটনার দিন তারা রিংকনকে খামারের আমগাছে আম পাড়তে বলে। কিন্তু গাছে বিদ্যুতের তার জড়ানো থাকায় রিংকন অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা রিংকনের মাথা ও মুখ গোবরের স্তূপে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার নাটক সাজায়।

পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান বলেন, ঘটনাটি ছিল প্রায় এক বছর আগের এবং কার্যত কোনো ক্লু ছিল না। প্রায় নয় মাস পর আমরা তদন্তভার পাই। শুধুমাত্র প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও নিবিড় তদন্তের মাধ্যমেই আমরা মূল আসামিদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ