গুম পরিস্থিতি: একদিনে নিখোঁজ আওয়ামী লীগের চারজন, পাঁচ বছরেও খোঁজ মেলেনি

প্রকাশিত: ১:২৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২

গুম পরিস্থিতি: একদিনে নিখোঁজ আওয়ামী লীগের চারজন, পাঁচ বছরেও খোঁজ মেলেনি

বাংলাদেশের গুমের অভিযোগগুলোর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হয় না বলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা জানিয়ে আসছে দেশি বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলো। এমনই একটি অভিযোগ নরসিংদীর রায়পুরার যুবলীগ নেতা আজিজুল ইসলামের স্ত্রী রানু আরা বেগমের।

তিনি বলেন একসাথে চারজনকে ধরে নেয়ার পর প্রায় ৫ বছর ধরে সবাই নিখোঁজ। তার কথায়, “পুলিশ কোনো তদন্ত করে নাই। চারটা লোক নিয়া গেছে। পুলিশ কি তদন্ত করবে কি, তারাই তো ধরে নিছে”

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০১৭ সালের ২৬শে মে বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন থেকে সাধারণ মানুষের সামনে থেকে রূপ মিয়া মেম্বার, আজিজুল ইসলাম, হাবিব মেম্বার ও জাকির নামের চারজনকে ধরে নিয়েছিল পুলিশ। এই চারজনই ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী।

আজিজুল ইসলামের ভাই হরুন মিয়া বলেন, “আমরা ভাবছি পরের দিন চালান দিব। পরের দিন থানায় গেছে দেখে না থানায় লোক নাই। থানায় লোক নাই। কোর্টে লোক নাই। জেলে লোক নাই, লোক গেল কই।”

নিখোঁজ আজিজুল ইসলামের পরিবার জানায় স্থানীয় যুব লীগের নেতা ছিলেন আজিজুল। তার স্ত্রী রানু আরা বেগম দাবি করেন তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এটা তিনিসহ এলাকার শত শত মানুষ দেখেছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “বলার মতো কোনো ভাষাই আমার কাছে নাই। তারপরেও বলি। আমার বাচ্চাগুলোর দিক তাকায়া আপনারা চেষ্টা করেন। আমার তিনটা বাচ্চা। আমি কীভাবে চালাবো। মানুষের বাড়ি থাইকা কাজ কইরা আইনা আইনা খাই। এমনও দিন যায় পোলাপানরে না খাওয়াইয়া রাখি।”

পরিবার এবং স্থানীয়দের দাবি আজিজুলকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় রূপ মিয়া মেম্বারের সাথে। বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি সংঘর্ষের মামলায় আসামী ছিলেন রূপ মিয়া মেম্বার। তার স্ত্রী নাসিমার প্রশ্ন অপরাধ করলে সাজা হোক কিন্তু এভাবে গুম করা হবে কেন?

তার দাবি, “অপরাধী হয়ে থাকে অপরাধের সাজা আপনার জেলে দেন আইনা। পাঁচ বছর গেছে আরো ১০ বছর দেন আপত্তি নাই। সরকারের কাছে ইডাই আমার আবেদন, আমরা লোকগুলান ফেরত চাই।”

রায়পুরা উপজেলা শুধু নয় পুরো নরসিংদীর অনেকেই ওই ঘটনা জানেন। ২০১৮ সালে স্থানীয় এমপি রাজি উদ্দীন আহমেদ রাজু নিজ এলাকায় এক সভায় বক্তৃতায় রূপ মিয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেন। ওই বক্তৃতাটি এখনো রায়পুরা যুবলীগ নামের একটি ফেইসবুক পেইজে রয়েছে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে এমপিকে বলতে শোনা যায়- “মনে রাইখো মাছের পেটে যাইও না। রূপ মিয়া টুপ মিয়া পুলিশ তাদের কোথায় খাইয়া ফালাইছে তাদের – পুলিশ জানে। পুলিশ করতে পারে না এমন কোনো কাজ নাই। একদিন দেখবা টুপ করে তোমারে ধইরা নিয়া গেছে।”

এ বক্তব্য প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীন আহমেদ রাজু টেলিফোনে বিবিসিকে বলেন, “অনেক সময় পরিস্থিতি বুঝে বক্তব্য দিতে হয়”।

নিখোঁজ চারজনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই দিন পুলিশ আক্রান্ত হয়েছিল তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিল। তারপর চারজন নিখোঁজ হয়। আমি হোম মিনিস্টারকে জানিয়েছিলাম। তৎকালীন এসপি আমিনা বেগম নিজে গিয়েছিলেন অপারেশনে। তার পরে আর বলতে পারবো না। তাদের পরিবার আমার কাছে আসছিল। তাদের কোনো হদিস নাই।”

এদিকে স্থানীয়রা জানান চারজনকে ধরে নেয়ার সময় বাধা দেয়ায় গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে।

ওইদিন পুলিশের ছররা গুলিতে আহত একজন বলেন, “একজন আসামী আর তিনজন ভাল মানুষ নিয়া যাইতে লইছিল। আমরা বাধা দিছি, যে হেরাতো আসামী না হেরারে কেন নিয়া যাইতেছেন। পরে পুলিশ আমাদের উপর গুলি করছে। গুলিতে একজন মারাও গেছে।

সুত্রঃ বিবিসি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ