দোয়ারাবাজারে বাসাবাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ

প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২২

দোয়ারাবাজারে বাসাবাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ

­

ইউএস বাংলা বার্তা সিলেট প্রতিনিধিঃ  সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করা, বাসাবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, ক্ষতিসাধন, চাঁদা দাবি ও বাসার গেইট তালাবদ্ধ করে ভাড়াটিয়াদের তাড়িয়ে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেছেন দোয়ারাবাজার নাহার মঞ্জিলের বাসিন্দা ওয়াছির আলীর মেয়ে সেবিনা ইয়াসমিন। শনিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার উদ্দেশ্যে এরুয়াখাই গ্রামের মৃত মোস্তফা মিয়ার পুত্র আবুল কাশেম ও তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী একের পর এক বাসাবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, মহিলাদের সাথে অশালীন আচরণ, সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, চাঁদা দাবি ও বাসার গেইট তালাবদ্ধ করে ভাড়াটিয়াদের তাড়িয়ে দেওয়াসহ নানারকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরা প্রভাবশালী হওয়ায় বারবার অভিযোগ নিয়ে গেলেও দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর আগেও গত অক্টোবর মাসে আমার মা মোছা. সামছুন নাহার দোয়ারাবাজারে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের নির্যাতনের চিত্র তোলে ধরেছিলেন। কিন্তু এর পর থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার মা নারী নেত্রী সামছুন নাহার ২০০৮ সালে জনৈক আবদুল মালিকের কাছ থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের বাজিতপুর মৌজার দাগ নং ১২৮/১ এ সাফকাবলা দলিলমূলে ১১ শতক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ডোবা জায়গা ভরাট করে সেখানে আমরা সবজি বাগান এবং টং ঘর নির্মাণ করি। পরবর্তীতে হঠাৎ করে উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের এরুয়াখাই গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম একটি ভুয়া দলিলের ভিত্তিতে ওই সম্পত্তি নিজেদের দাবি করে জমি ছেড়ে দিতে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দেন। এমনকি আমাদের বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন।
হামলার অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আবুল কাশেম গংরা দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। তারা দরজা জানালার গ্লাস ও সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে। এ ঘটনায় আমার মা বাদী হয়ে আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন। যার নং ২০১৮/২১। এ মামলার তদন্ত করে পিবিআই। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৩ নভেম্বর পিবিআই আমাদের পক্ষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের পক্ষে আসার পর আবুল কাশেম আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। এমনকি গত ২৩ জানুয়ারী সে আদালত থেকে অস্থায়ী জামিন পাওয়ার পর আরো হিং¯্র রুপ ধারণ করে। সে কৌশলে এ জায়গার পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দিয়ে দেয় মুরাদপুর গ্রামের লালা মিয়ার পুত্র হাবিবুর রহমানকে। হাবিবুর রহমান এর আগে তিনটি মামলার আসামি। সে র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল।
চাঁদা দাবির অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমমোক্তার নিযুক্ত হওয়ার পর হাবিবুর রহমান আমাদের নিকট ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে তার সহযোগী আল আমিন, আব্দুল জলিল, শামীম আহমদ, আমরু মিয়া, ইমন ও ফারুক মিয়াকে নিয়ে একাধিকবার আমাদের বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এদের মধ্যে শামীমকে ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এমনকি তারা বিষাক্ত কিটনাশক দিয়ে আমাদের বাড়ির অনেকগুলো গাছপালা বিনষ্ট করে। সন্ত্রাসীরা গত ১৭ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে আমাদের বাসা দখলের জন্য ব্যাপক হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় ১৯ নভেম্বর দোয়ারাবাজার থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ অনীহা প্রকাশ করে। গত ১৩ ডিসেম্বর আমাদেরকে তালাবদ্ধ করে উক্ত জায়গার উপর নির্মিত আমাদের টং ঘর উঠিয়ে নিয়ে যায় ভূমিখেকো সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলেন, আবার ১৮ ডিসেম্বর রাতে আমাদের বাসায় তারা আক্রমণ করে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে ১৯ ডিসেম্বর আমরা আবার দোয়ারাবাজার থানায় মামলা দিতে যাই। থানার ওসি কাগজ রেখে আমাদের বিদায় করে দেন। পরবর্তীতে জানান তিনি মামলা নিতে পারবেন না। গত ৫ জানুয়ারি রাতে আবার তারা আমাদের বাসায় হামলা করে। হামলার সাথে সাথে আমরা ওসিকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। তিনি কোনো কিছু না বলে ফোন কেটে দেন। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে এসআই মিজানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। এ ঘটনায়ও পুলিশ মামলা নেয়নি। গত ৭ জানুয়ারি হাবিবুর রহমান ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িতে এসে জায়গা ছেড়ে দিতে হুমকি-ধমকি দিয়ে যায়। অন্যথায় আমাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় আমরা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি গভীর রাতে আবার এই ভূমিখেকো চক্র আমাদের বাসায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে কাচের জানালা, পুনরায় স্থাপিত সিসি ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক মিঠার ভাংচুর, পানির মটর ভাংচুর ও ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাদের হামলায় আমি গুরুতর আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ ঘটনায়ও মামলা নেয়নি দোয়ারাবাজর থানা পুলিশ। থানার ওসির সাথে এই সন্ত্রাসী চক্রের খুবই সংখ্যতা থাকায় বারবার অভিযোগ দিলেও তা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ২৫ জানুয়ারি রাতে হাবিব বারবার আমার মাকে মোবাইলে কল দিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। সব মিলিয়ে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ