সিলেটে পাথর ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ, আমদানি বন্ধ

প্রকাশিত: ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২২

সিলেটে পাথর ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ, আমদানি বন্ধ

ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে আট শতাধিক ট্রাকে করে প্রতিদিন আমদানি করা হয় প্রায় ১০ হাজার টন পাথর। যার প্রাথমিক বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে এই বন্দরে রাজস্বখাতে প্রতিদিন জমা হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। কিন্তু সমন্বয় না করে বন্দরে অটো এসএমএস সফটওয়ার চালুর প্রতিবাদে এই বন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার এই পদ্ধতি চালু হলে আমদানি বন্ধ করে দেয় তারা।

আজ রোববার বিকেলে এ প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত বন্দরে আসেনি কোনো পণ্যবাহী গাড়ি। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানে পড়েছেন সাথে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারও। বেকায়দায় পড়েছেন পাথর ও অন্যান্য পণ্য লোড-আনলোড, পরিবহণ ও পাথর ভাঙার সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক শ্রমিক।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘হয়রানি এড়াতে তারা এটি করছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তারা সমাধান পাচ্ছেন না। গত ১৪ অক্টোবর এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সমন্বয়ের প্রস্তাব নিয়ে ডিও দিয়েছেন নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে। তবে তাতে কাজ হয়নি কিছুই।’

বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তের দু’ধারেই এতদিন চালু ছিল ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মাপজোখ। একসময় তামাবিল স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থাপন হয় ওজন মাপার স্কেল। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে চলতি মাসের সাত তারিখ থেকে বন্দরে চালু হয়েছে অটো এসএমএস সফটওয়ার। এতে প্রতিটি গাড়িকে নতুন করে পুরো আমদানির তথ্য দিতে হবে বন্দরে এসে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। কেননা তথ্য নতুন করে দিতে হলে একটি গাড়ি বন্দর অতিক্রম করতে লাগতে পারে দশ মিনিট সময়। এতে নির্ধারিত সময়ে ২০০ বেশি গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না বন্দরে। পণ্য নিয়ে প্রতিদিন সীমান্তে আটকে থাকবে ৫০০ বেশি গাড়ি। এতে বাড়বে লোকসান।’

সরেজমিনে দেখা যায়, তামাবিল স্থলবন্দরের সঙ্গে সমন্বয় করতে ভারত অংশেও স্থল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে আরও অন্তত দু’মাস।’

তামাবিল পাথর, কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘পাথরই তামাবিল বন্দর দিয়ে আমদানি করা প্রধান পণ্য। ভারতের ব্যবসায়ীরা পাথর রপ্তানি করে থাকেন ফিতা দিয়ে মেপে। ফিতা দিয়ে মাপা এবং বোল্ডার পাথর আমদানি করার কারণে ওজনে হয় হেরফের। বোল্ডার পাথরের সঙ্গে থাকা পানি ও মাটিও ওজনের হেরফের ঘটায়। ফলে ভারত থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতির কাগজ নিয়ে এসে বাংলাদেশ বন্দরে বেকায়দায় পড়তে হবে আমদানিকারকদের। সব তথ্য নতুন করে দেওয়ার সাথে ওজনের তারতম্যের জন্য গুণতে হবে জরিমানা। ওজনে কম হলেও দিতে হবে নির্ধারিত ওজনের টাকা।’

জানতে চাইলে তামাবিল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মো. মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘তামাবিল বন্দরে এতদিন শুধু ওজন মাপার স্কেল চালু ছিল। এখন ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে অটো এসএমএস পদ্ধতি চালু হল।’

নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে শুনেছি। তবে এই পদ্ধতি চালু হলে ব্যবসায়ীরা ঘরে বসেই তাদের আমদানির সব তথ্য পেয়ে যাবেন, এতে তাদের সুবিধাই হবে।’

ব্যবসায়ীরা এই পদ্ধতির বিপক্ষে নয় দাবি করে তামাবিল পাথর, কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সহ সভাপতি আলী জালাল উদ্দিন সিআইপি বলেন, ‘ভারতের বন্দর কাঠামো সম্পন্ন হয়ে গেলে সেখান থেকেই পূর্ণ তথ্য নিয়ে দেশে আসবে পণ্যবাহী গাড়ি। এতে তথ্য প্রদানে সময় কমবে, থাকবে না ওজনের তারতম্যও। ডিজিটালাইজেশন করতে গিয়ে তামাবিল বন্দরের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নেওয়ার বিষয়টিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।’

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হোসেন ছেদু বলেন, ‘পণ্যবাহী গাড়ি নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় সীমান্তে আটকে থাকার সাথে ওজনের তারতম্যের কারণে জরিমানা গুণতে হলে লো-কস্ট পণ্য পাথর আমদানির খরচ দাঁড়াবে দ্বিগুণে।’

পাথর আমদানি গ্রুপের সদস্য মাফিজ ইসলাম বলেন, ‘এখনো দেশের বড় বন্দরগুলোতেও অটো এসএমএস পদ্ধতি চালু হয়নি। তবে দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ীরা ডিজিটালাইজের পক্ষে। কিন্তু তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা প্রধান পণ্য পাথর হওয়ায় ব্যাপারটিতে দু দেশের সমন্বয় প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘তামাবিল বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করা সহস্রাধিক ব্যবসায়ীর ঘাড়ে এখন পাথর বোঝা হয়ে চেপে আছে। আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। সরকারও প্রতিদিন হারাচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব।’

খবরটি ভাল লাগলে লাইক এবং শেয়ার করবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ